সম্পাদকের কথা

শীতের দিনে খাওয়াদাওয়াটা সেরে বারান্দায়, দুপুরের রোদে বেশ আমেজ নিয়ে বসেছিলাম। হঠাৎ মনে পড়ল, আধার লিংক করাতে হবে। তাই ব্যাজার মুখে দরজা দিয়ে বেরোতেই নাকে কে যেন একটা রুমাল চেপে ধরলো। তারপর সব অন্ধকার।

চোখ খুলতে দেখি এক অচেনা ঘরে শুয়ে আছি। মাথা ঝিম ঝিম করছে। এতদিনে গল্প উপন্যাস তো কম পড়লাম না। সিনেমা-টিভি সিরিজও কম দেখলাম না। কেউ কিডন্যাপ করেছে বুঝতে তাই সমস্যা হল না। কিন্তু হাত পা বাঁধা নেই কেন? কোথায় সেই গুদামঘর, একগাদা প্যাকিং বাক্স, হাতলভাঙা চেয়ার? বদলে বেশ ছিমছাম, পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন ঘর, পরিপাটী বিছানা। ঘরে যেদিকে একটা দরজা থাকার কথা সেদিকে তাকালাম কিন্তু হাতলহীন একটা অস্বচ্ছ দেয়াল চোখে পড়ল। সামনে গিয়ে দাঁড়াতে নিজে থেকেই খুলে গেল। বাইরে আসতেই চক্ষু চড়কগাছ হয়ে গেল।

দেখলাম এক আজব দুনিয়াতে এসে পড়েছি। একদম সাইফাই সিনেমার মত আকাশে উড়ন্ত যান চলাচল করছে। বাইরে রাস্তায় অনেক লোক হাঁটছে। সবাইকে দেখতে একই রকম আমাদের মতন। কিন্তু পরনে অদ্ভুত সব পোশাক, হাতে ফোনের মতো দেখতে আশ্চর্য কিছু একটা। সবকটায় ত্রিমাত্রিক ছবি, লেখা সব একেবারে ভেসে ভেসে উঠছে। দরজার বাইরে একটা বাচ্চা মত ছেলে দাঁড়িয়েছিল। আমি বেরোতেই ঝরঝরে বাংলায় আমায় বলল, “আপনার ঘুম ভাঙলো?”

এরকম আজব দেশে বাংলা বুলি শুনে চমকে গেছিলাম। ওর কাছ থেকেই জানতে পারলাম, এই গ্রহের নাম সাইবং। একটা যন্ত্রের সাহায্যে এরা যেকোনো ভাষায় যেকোনো লোকের সঙ্গে ভাবের আদান প্রদান করতে পারে। এদের সময়ের হিসেব আমাদের সঙ্গে না মিললেও এটুকু বুঝতে পারলাম এরা অন্তত বিজ্ঞানচর্চায় আমাদের থেকে অনেকটাই উন্নত।

আমি চটেমটে জিজ্ঞেস করলাম, “অ্যাই শোন, আমায় ধরে এনেছ কেন?” ছেলেটা হাসল তারপর বলল, “আরে মশাই। জানবেন সব, আগে দেখুন কোথায় এসে পড়েছেন।” তারপর একটা উড়ন্ত যান বোতাম টিপে নামিয়ে সেটায় ওঠার নির্দেশ দিল।

সেই উড়ন্ত যানে যেতে যেতে যা দেখলাম তাতে পিলে চমকে যাবার জোগাড়। দেখলাম একটা শহরে রোবট খুনের তদন্ত করছেন ব্যোমকেশ বক্সী। পাশেই আর এক জায়গায় কৃত্রিম মৌল চুরির কিনারা করতে তলব পড়েছে স্বয়ং ফেলু মিত্তিরের। ওদিকে প্রফেসর শঙ্কু আর প্রফেসর নাটবল্টু চক্র একসঙ্গে কোলাবোরেশন করেছেন। জিজ্ঞেস করে জানা গেল তাঁরা তৈরী করছেন এক সুপারকম্পিউটার যা দিয়ে এই ব্রহ্মাণ্ডের সব গ্রহের সব প্রশ্নের উত্তর পাওয়া যাবে। এই কাজে তাঁদের সাহায্য করছেন বিজ্ঞানী চন্দ্রকান্ত। এক অজানা দ্বীপে, অজানা রহস্য সন্ধানে নৌকো ভাসিয়েছেন জয়ন্ত মানিক আর সঙ্গে কর্নেল নীলাদ্রি সরকার।

এই সব দেখতে দেখতে আমায় সেই ছেলেটা নিয়ে গেল একটা বিশাল সবুজ হাতের কাছে। জানতে পারলেন তিনিই এই গ্রহের অধিপতি। যদিও গলাটা কোথা থেকে আসছে বুঝতে পারলাম না কিন্তু সেই বৃহৎ হাত এক জলদগম্ভীর কণ্ঠে আমায় জিজ্ঞেস করলেন, তোমায় কেন ধরে আনা হয়েছে জানো? উত্তরে ঘাড় নাড়তে জানালেন, পরবাসিয়া পাঁচালীর বিশেষ সংখ্যা করতে হবে রহস্য ও কল্পবিজ্ঞান নিয়ে। না হলে মুক্তি নেই। এখানে বাংলার যে প্রথিতযশা গোয়েন্দা আর বৈজ্ঞানিককে দেখলাম তাদেরও নানা এরকম কাজের ভার দেওয়া হয়েছে যা করলে তবেই তাঁরা ছাড়া পাবেন। এইসব শুনে আমি এমন চমকে উঠলাম যে চট করে ঘুমটা ভেঙে গেল। যাহ আজকেও আর আধার লিংক করতে যাওয়া হল না!

যাই হোক, নতুন বছরে শুরুতেই আমাদের নিবেদন রহস্য ও কল্পবিজ্ঞান সংখ্যা। কারণ বলা তো যায় না কোনদিন কিডন্যাপ হয়ে যেতেও পারি। সাবধানের মার থুড়ি সাইবং তো নেই! ভালো থাকবেন। ভালো রাখবেন। এবারের মতো এইটুকুই।