বিসর্জন - সই

ইচ্ছে ছিল, এবার শারদীয়ায় শিউলি মাখা ভোরে
শিশিরে পা ভিজিয়ে আগমনীর গান শোনাব তোমায়,
তুলো পেঁজা মেঘের ভিতর দিয়ে উঁকি দেবে সোনালী রোদ্দুর;
গান শেষে, জড়িয়ে টেনে নেবে তোমার বুকের কাছে
আর আমি জন্মের কান্না কাঁদব তোমায় আঁকড়ে...

ইচ্ছে ছিল, ঝিমিয়ে পড়া এক বিকেলে হাঁটব তোমার সাথে,
তোমার হাতের ’পরে আমার হাত, পা মেলাবে পায়ের সাথে;
কথা বলব অনেক, যারা জমে আছে রাতের পর রাত,
এক কোণে ঘাপটি মেরে, খুব চুপচাপ, হারিয়ে যায়
তবে ফুরোয় না কিছুতেই, থাকে আড়ালে আবডালে...

ইচ্ছে ছিল, ঈশান কোণের এক শ্রাবণ মেঘ জমাবো চোখে,
ভীষণ অভিমানে মুখ ফিরিয়ে চলে আসব যখন, তখন তুমি
মানিয়ে নেবে আমায়, বাঁধ ভাঙবে শ্রাবণের, দুচোখের
জল তুমি আটকে দেবে আঙুল দিয়ে চিবুক স্পর্শ করার আগেই
তারপর উষ্ণতার বৃষ্টি নামবে ঠোঁটজুড়ে, ভীষণ ভালোবেসে...

জমানো কথারা হারিয়েছে স্বরে, বিস্মৃতির শরণাপন্নে আশ্রিত স্মৃতি;
অবিরত অন্তঃক্ষরণের জ্বালায় কান্নারা শুকিয়েছে গলার কাছে।
নির্জীব ঠোঁট, আজ ফ্যাকাশে শুকনো শীতলতায় মোড়া।
চোখে জমেছে ধূসর মেঘ, আবছা করেছে অবচেতনের দৃষ্টি;
আগমনীর সুর বদলেছে বিসর্জনের মহোল্লাসে।

হয়তো আর কোনো দিন দেখা হবে না, স্মৃতিতেও না, স্বপ্নেও না;
পথ হয়ে গেল আলাদা, এত দিন আমি দূরে দাঁড়িয়ে ছিলাম
মোড়ে মোড়ে বড্ড ভিড় জমেছে তাই, তুমি ভীষণ দূরে আজ আমার থেকে
তোমাকে পাশ কাটিয়ে যাচ্ছি তাই স্পর্ধিত আমার পা মাটিতে নেই
মহাযাত্রার পথে পা বাড়িয়েছি, চারিদিকে হরধ্বনির চরম স্নিগ্ধতা!

আর আমার মন গাইছে “আমি তোমারই তোমারই তোমারই নাম গাই, আমার নাম গাও তুমি”....


অলংকরণ - নাদিয়া (শাটারস্টক)