একটি কল্পিত গল্পকথা - কৃশানু চন্দ

স্থান — হনুগড়
সময় — ১৯৭২

হনুগড়ের মধ্যে অরাজকতা। ছোট ছোট শিশুশাবকদের সিধুহাত হাতির তান্ডবে মরতে হচ্ছে। জঙ্গলের মধ্যে সবাই ভীত, শঙ্কিত মন নিয়ে কাঁপছে। কিছুই বলা যাচ্ছে না কবে কিভাবে এই ভয়ঙ্কর সমস্যার সমাধান হবে।


ওপরতলার মাংসাশী প্রাণীরা দিন দিন মোটা হচ্ছে।


সব সাধারণ পিঁপড়েরা খাটছে, খিদের চোটে কষ্ট পাচ্ছে, রুগ্ন হয়ে মরছে, আবার জন্মাচ্ছে।


স্থান — হনুগড়

সময় — ১৯৭৭

হনুগড়ে আলোলাল সিংহের আগমন।জঙ্গলের পশুপাখীদের সঙ্গে নিয়ে দাপটের সাথে সিধুহাত হাতিকে পরাজিত করে অবশেষে হনুগড়ে শান্তি আনেন আলোলাল সিংহ।


ওপরতলার মাংসাশী প্রাণীরা দিন দিন আরও মোটা হচ্ছে।


সব সাধারণ পিঁপড়েরা আরও খাটছে, খিদের চোটে আরও কষ্ট পাচ্ছে, রুগ্ন হয়ে মরছে, আবার জন্মাচ্ছে।


স্থান — হনুগড়
সময় — ১৯৭৭-৯০

হনুগড়ে শান্তির বাতাবরণ, কিন্তু সাথে রয়েছে আলোলাল সিংহের ভয়। তাঁকে ভয় না করলে যখন তখন বিপদ আসতে পারে। চাপা আতঙ্ক, খাদ্যভাব।


ওপরতলার মাংসাশী প্রাণীরা দিন দিন আরও মোটা হচ্ছে। সব খেতে না পেরে ফেলে দিচ্ছে।


সাধারণ পিঁপড়েরা আরও খাটছে, খিদের চোটে আরও কষ্ট পাচ্ছে, রুগ্ন হয়ে মরছে, আবার জন্মাচ্ছে।


স্থান — হনুগড়

সময় — ১৯৯০-২০১১

আলোলাল সিংহের দাপট কমলেও সাধারণ পশুপাখীদের অপার শ্রদ্ধা ও তাঁর পিছনে থাকা ভয় তাঁকে থামতে দেয়নি। কিন্তু বার্ধক্যজনিত কারণে তিনি সরে গেলে বুধুয়ালাল বাঘকে তাঁর রাজ্যপাটের ভাগ দিয়ে যান। তাঁর নতুন নতুন ভাবনায় জঙ্গল সেজে ওঠে। কিন্তু এই ধরনের আধুনিক নীতি চায়নি জঙ্গলের পশুপাখীরা।তাই বহুদিন গিরিগিটি সম্রাজ্ঞী সবুজমেমকে পাশে নিয়ে তাঁরা আন্দোলন করে।


বিপুল লোকবলের চাপে বুধুয়ালালের পরাজয় এবং সবুজমেমের জীবনের নতুন সূচনা।


ওপরতলার মাংসাশী প্রাণীরা এতটাই মোটা হচ্ছে, যে চলাফেরা করতেও অসুবিধে হচ্ছে।


সাধারণ পিঁপড়েরা আরও খাটছে, খিদের চোটে আরও কষ্ট পাচ্ছে, রুগ্ন হয়ে মরছে, আবার জন্মাচ্ছে।


স্থান — হনুগড়

সময় — ২০১১-২০১৭

গিরিগিটি সম্রাজ্ঞী সবুজমেমের রাজত্বে আইন ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়তে থাকে। ওনার সভার প্রায় সবাই জঙ্গলের লোকেদের খাদ্য নিজে ভোগ করে বসে আছেন। অনেকেই অসন্তুষ্ট। এদিকে হনুগড়ের বাইরে বিশাল রামরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী হন নরু শেয়াল।তাঁর রাবণরাজ্যের প্রতি রামরাজ্য মানুষের হিংসা তাঁকে সাফল্যের চূড়ায় পৌঁছে দেয়। তবে প্রথম থেকেই তাঁর নজর হনুগড়ের দিকে। কিন্তু গিরিগিটি সম্রাজ্ঞী সবুজমেমের জন্যে তা হচ্ছে না। ওদিকে বুধুয়ালাল বাঘও নিজের অস্তিত্ব জানান দিতে তীব্র হুঙ্কার দিতে থাকে। ত্রিমুখী দ্বন্দ্বে জ্বলতে থাকে হনুগড়।


ওপরতলার মাংসাশী প্রাণীরা দিন দিন আরও মোটা হচ্ছে। খিদে এখন না পাওয়াতে শুধু শখের বশে তারা এখন পিঁপড়ে মারছে। 


সাধারণ পিঁপড়েরা আরও খাটছে, খিদের চোটে আরও কষ্ট পাচ্ছে, রুগ্ন হয়ে মরছে, পিষ্ট হয়ে মরছে, কিন্তু আবার জন্মাচ্ছে।


স্থান — হনুগড়

সময় — ২০১৭-২০৫০

ওপরতলার মাংসাশী প্রাণীরা এখন আর কোন রাজত্ব মানছে না। নিজেদেরই তারা রাজা ঘোষণা করেছে। তাই বুধুয়ালাল বাঘ, নরু শেয়াল, গিরিগিটি সম্রাজ্ঞী সবুজমেম ও সিধুহাত হাতি চারজনেই হাত মিলিয়েছে। শুরু হবে যেন এক ভয়ঙ্কর ঝড়। হনুগড়ের সবুজ জঙ্গল আস্তে আস্তে ন্যাড়া হয়ে যাচ্ছে কেন?


ওপরতলার মাংসাশী প্রাণীরা আর মোটা হচ্ছে না। ব্ল্যাক হোলের মতো চেহারা তাঁদের। যেদিকে তাকাচ্ছে,সেটাই গ্রাস করে নিচ্ছে।


সাধারণ পিঁপড়েরা এখনও বাঁচবার জন্য খাটছে, খিদের চোটে আরও কষ্ট পাচ্ছে, রুগ্ন হয়ে মরছে, পিষ্ট হয়ে মরছে, কিন্তু আবার জন্মাচ্ছে।

স্থান — মরুভূমি হনুগড়
সময় — ২০৫০-অনন্তকাল

যুদ্ধ শেষ। ওপরতলার মাংসাশী প্রাণীরা শুধু হনুগড় নয়, রামরাজ্য, রাবণরাজ্য এমনকি ট্রাম্পল্যান্ডও গ্রাস করে ফেলেছে। গোটা পৃথিবী এখন তাঁদের দখলে। কেউ নিঃশ্বাস পর্যন্ত নিতে পারে না তাঁদের হুকুম ছাড়া।


পৃথিবীতে সবুজ রং নেই আর।শুধুই ধু ধু মরুভূমির ওপর প্রচুর লাল রঙের ছোপ।


হয়তো রক্ত।


মাংসাশী প্রাণীরা আজ পৃথিবীর ধারক ও বাহক।


পিঁপড়েরা আর জন্মায় না।


ওদের ক্লান্ত কঙ্কালগুলির ধূলিকণায় চোখ জ্বলতে থাকে, চোখ ভিজে যায়।


চিত্রালংকরণ - কর্ণিকা বিশ্বাস