পদ্ম ও কিশোর - শাশ্বত বন্দ্যোপাধ্যায়

প্রত্যেক বছর পুজো এলেই আমাকে নিজের একটা
পুরোনো ছবি পাঠায় ঋভু —
মামাবাড়ির দুর্গাদালানে বসে আছে ও, এদিকে ফেরানো মুখ
হাতে ধরা একখানা ফুটি ফুটি পদ্মকলি।
ওর মুখে হাসি নেই, দুঃখ নেই
কেবল শরতের সুখবর-আনা মেঘ ভেসে যাচ্ছে
এদিক থেকে ওদিক, ওদিক থেকে সেদিক...

এই এলোমেলো মেঘে পুজো আসে, পুজো চলে যায়।
ঢাক-কাঁসর-ঘন্টা বাজিয়ে জলের ধারে গিয়ে দাঁড়ায় মানুষ —
তখনই, আটচালা কিংবা মন্দিরের বাইরে, মুক্তনদীতটে
প্রকৃত বোঝা যায় মাতৃপ্রতিমা কত দূর —
মূর্ধায় স্পর্শ করে ঊর্ধ্বাকাশ, অন্তরাকাশ, দশদিক
নক্ষত্রলোক থেকে ব্যথার পৃথিবী
ধুলোয় ধুলোয় ছুঁয়ে থাকে শরৎকালের বিম্বমূর্তি এক...

একদিন ঢাকিরা ফিরে যায়। মলিন হয়ে পড়ে রোদ।
ঋভুর ছবিটা বের করে দেখি —
শূন্য দেউলচত্বরে ধান খুঁটছে ছাইবর্ণ ঘরপায়রার দল,
সিঁড়ির একটা ধাপিতে ও বসে আছে —
মুখ দেখা যাচ্ছে না, মুখ ওদিকে ফেরানো
হাতে ধরা পদ্মকলির বুকে একটি রাতুল ছাপ
বাকি পদচিহ্নেরা নিঃশব্দে জলের দিকে নেমে গেছে...


চিত্রালংকরণ - কর্ণিকা বিশ্বাস